× Warning! Check your Cooke | Total Visitor : 86847

বিশেষ প্রতিবেদন

Published :
13-09-2020
09:15:41am

Total Reader: 428



শাপলায় চলে ওদের সংসার


রাজু আহমেদ : ষড়ঋতুর এদেশে বর্ষার রয়েছে আলাদা গুরুত্ব, প্রকৃতি এসময় দারুন চঞ্চল। এই সময়টাতে প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। তবে প্রকৃতি কাউকেই নিরাশ করে না। যারা বুদ্ধিমান ও কর্মঠ এই কটা মাস তারা নিজেদের পেশা বদলে ফেলে। নদীসহ স্থানীয় জলাধারগুলোতে ছিটিয়ে থাকা উন্মুক্ত সম্পদ এসময় অর্থ উপার্জনের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়। পেশা বদলিয়ে এসময়টাতে কেউ মাছ ধরে, নয়তো নৌকা চালিয়ে অথবা শাকসবজি কুড়িয়ে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।

শাপলা জাতীয় ফুল হলেও, বিভিন্ন জলাধারে অযত্নে গজিয়ে ওঠা শাপলা ও শালুকের সবজি হিসেবে রয়েছে আলাদা পরিচিতি। শাপলা ফুল সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। বর্ষায় এর ফলন বৃদ্ধি পায়। এই বর্ষায় রাজশাহীর উপজেলাগুর শতশত দরিদ্র পরিবার শাপলা সংগ্রহ ও বিক্রি করে সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন। বর্ষা মৌসুম আসলেই বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাধার থেকে শাপলা সংগ্রহ করে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে এসব পরিবারের সংসারের খরচ দিব্বি পুরণ হচ্ছে। বিনা পুঁজিতে শুধুমাত্র পরিশ্রমেই দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করছেন একেকজন কৃষক।

রাজশাহী অঞ্চলের প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রমা-গঞ্জের মাঠে-ময়দানে প্রকৃতির ছবির সন্ধানে সারাদিন ছুটে বেড়ানো দৈনিক সানশাইনের ফটো চিফ ও ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক আজাহার উদ্দিন বলেন, এবার খাল-বিলসহ জলাধরে গত ২০ বছরে এভাবে শাপলা ও শালু ফুটতে দেখিনি। এবার বৃষ্টিও একটু বেশি হয়েছে। করোনায় একদিকে যেমন মানুষের ক্ষতি হয়েছে, তেমনি প্রকৃতির দারুণ উপকার করেছে। প্রকৃতি সুন্দর হয়ে সেজে উঠেছে। যার ইতিবাচক ফল পাবো আমরাই। হয়তো কোটি-কোটি টাকা খরচ করেও দুষণমুক্ত এমন পরিবেশ তৈরি করা সম্ভভ হতো না। এখন গ্রামাঞ্চলে গেলেই রাস্তার দুই পারে খালবিল ও ডোবাতে অনায়াসে দেখা মিলছে শাপলা, শালুক, পদ্মসহ এই প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া নাম না জানা অনেক জলজ উদ্ভিদ।

শরতের শেষ বেলায় এসেও বর্ষার পানিতে এখনো টইটুম্বর জেলার তানোর, মোহনপুর, বাগমারা, পুঠিয়া, চারঘাটসহ ৯টি উপজেলার খাল-বিল ও ফসলি অনেক জমি। সেখান থেকে শাপলা-শালু তুলে তা বাজারে বিক্রি করছেন এসব এলাকার দরিদ্র পরিবারগুলো। প্রায় দুই মাস শাপলা বিক্রি করে পরিবারগুলোর যে রোজগার হয় তা দিয়ে বছরের বেশ কয়েকটা মাস তাদের সংসার চলে। কৃষি নির্ভর দিনমজুররা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত খাল-বিল ও বিস্তীর্ণ জমিতে জমে থাকা পানিতে জন্ম নেয়া শাপলা তুলে নিয়ে তা বিভিন্ন পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন, আবার অনেকে নিজেরাই খুচরা বাজারে বিক্রি করেন।

তানোর, মোহনপুরের হাটবাজারগুলোতে শাপলা সারিবদ্ধ স্তুপ চোখে পড়ে। বিকেলের দিকে পাইকাররা এসে ঢাকা বাজারে বিক্রির জন্য তা কিনে নিয়ে যান। এছাড়া নগরীর সাহেবাজার, শালবাগান, হরগ্রাম বাজরেও বিক্রি হতে দেখা যায় শাপলা ও শালুক।

শাপলা বিক্রিতে কোনো পুঁজির দরকার হয় না। স্থিত পানিতে গজিয়ে ওঠা শাপলা তুলে আনতে শাহসের দরকার হয়। শাপ ও জোঁকের মতো বিপদজনক প্রাণিগুলো জড়িয়ে থাকে পানিতে থাকা শাপলা ও শালুর সবুজ ডগায়। একটু অমনস্ক হলেই বিপত্তি। সতর্কতার সাথে সবুজ ডগাসহ শাপলা সংগ্রহ করে এরপর বিভিন্ন বাজারে গিয়ে তা বিক্রি করতে পারলেই নগদ অর্থ। বেশ কয়েক বছর ধরে রাজশাহী অঞ্চলে শাপলার আবাদ কমে আসে। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রকৃতি জোড় পেয়েছে। তাই স্থানীয় জলাধাবদ্ধ স্থানগুলোতে শাপলার উৎপাদনও ভালো। প্রকৃতির সেই আর্শিবাদে এখন অনেকেই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তানোর উপজেলার চান্দুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও শাপলা সংগ্রহকারী মনিরুল জানান, তিনি বছরের অন্যান্য সময় কৃষি জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। বর্ষা আসলেই কাজ কমে যায়, ঘটে বিপত্তি। তবে প্রায় ৫ বছর ধরে এই সময় আসলেই শাপলা-সালু তুলে তা বিক্রি করে সংসার চালান। তিনি বলেন, শাপলায় আমার জীবন চলে। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া।

মনিরুল আরো জানান, তার মতো এই এলাকায় অনেকেই আছেন যারা এই সময় এই কাজ করেন। সারা দিন শাপলা তুলে বিকেলে বাজারে গিয়ে বিক্রি করেন। এখন প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ আটি (২৫ পিস শাপলায় এক আটি) সংগ্রহ করতে পারে। এক আটি শাপলা ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি করা হয় স্থানীয় বাজারে।

গ্রামবাংলায় শাপলা-শালু সবজি হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে বহুবছর ধরেই। শাপলা সবজির বৈশিষ্ট্য হলো এটি নিরাপদ সবজি, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার মুক্ত। স্থানীয়দের দাবি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট শাপলা-শালুর উৎপাদন বৃদ্ধি ও চাষের বিষয়ে নজর দেয়া উচিত। এর সাথে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য জড়িত।

এসংক্রান্ত আরো সংবাদ : ফিচার




একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার চার পাশে ঘটে যাওয়া সংবাদ উপযোগী যে কোন ঘটনার ছবি বা ভুক্তভোগী ও সম্পৃক্তদের মোবাইল নম্বর আমাদের পাঠাতে পারেন।

সম্পাদক : রাজু আহমেদ

বার্তাকক্ষ
এসোসিয়েশন ভবন
৬১০০, রাজশাহী, বাংলাদেশ।
newsdailyrajshahi@gmail.com
call@ 01750142903